জীবদেহের গঠন বিষয়ে স্বল্প আলোচনা ও সংগৃহিত কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য

জীবদেহের গঠন বিষয়ে স্বল্প আলোচনা ও সংগৃহিত কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য

জীবদেহের গঠন বিষয়ে স্বল্প আলোচনা


সংগৃহিত কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য

ড. সুবোধ চন্দ্র গরাই

     ভারতের চতুরাশ্রম প্রথা মতে আমাদের মত বয়স্কজন অতিতে বা বর্তমানেও অনেকে বানপ্রস্থ গ্রহণ পূর্বক (বা সন্ন্যাসের প্রস্তুতি নিয়ে) হয় আচার সর্বস্য বাঁধাধরা গণ্ডিতে তথাকথিত ধর্মাচরণ বা আদ্যিকালের সেই সব শাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থ পাঠ পূর্বক সৃষ্টির আদি রহস্য খোঁজার চেষ্টা করে চলেন। ঐসবের অধিকাংশে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ বহির্ভূত গল্পকথা বা নিছক সাহিত্যকথার সেই আদ্যিকালে যাই মূল্য থাক না কেন, আজকের জগতে (गम् + क्किप् = जगत्) তার কি প্রণিধান যোগ্যতা রয়েছে? এমনকি দীর্ঘকাল আগের অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ব বা ব্যাখ্যা (যেমন, স্যার আইজ্যাক্ নিউটনের আলোকের সরলরেখায় গমন তত্ব) তো আজকের জ্ঞানালোকে তথা অধিকতর সুক্ষ বা শক্তিশালী যন্ত্রের গুণে ও উন্নততর কারিগরি ব্যাবস্থার নিরিখে হয় অনেকাংশে পরিবর্তিত/ পরিমার্জিত বা সর্বাংশে বাতিল হয়ে গেছে – আজকের অনেক তত্বেরও হয়ত পরে সেই দশা হবে, এবং আমাদের বা আগামী প্রজন্মকে তা মানতেই হবেসুতরাং আজকে কি সৃষ্টির আদি রহস্য খোঁজার পদ্ধতির বদল করা উচিৎ নয়?

যাক, এই প্রবন্ধটি সেই লক্ষেই একটি অতি ক্ষুদ্র প্রয়াস – যা বিভিন্ন সুত্র তথা গবেষক, গবেষণা সংস্থা, শিক্ষা ও অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার থেকে ধার করা বিদ্যার উপর
ভর করে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা। আলোচ্য বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞের কোনরূপ দাবি নাই  (আলোচনার বেশ কিছুই কম বেশী অনেক জনের জানা থাকা স্বাভাবিক) –
তবে যথোপযুক্ত যোগ্যতার অভাব জনিত ত্রুটি বা পরিবেশনার খামতি পরিলক্ষিত হলে তার জন্য আগাম মার্জনার ও ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ নিয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছি। সর্বোপরি,
আধুনিক ইণ্টারনেট ব্যবস্থা তথা জিও-ফাই-এর কল্যাণে স্বল্প ব্যয় ও প্রয়াসে যে কেউ অনুরূপ অনুসন্ধান করতে পারেন – উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়া ও প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইটগুলিতে অনেক আন্তর্জাতিক
মানের নির্ভরযোগ্য তথ্য সহজলভ্য এবং উইকিপিডিয়ার বহু তথ্য বাংলা সহ বিভিন্ন আধুনিক ভাষায়ও পাওয়া যাচ্ছে।

            আমাদের বর্তমান বিষয়, জীবদেহ নির্মাণের ইষ্টক স্বরূপ যে কোষ তার এবং তার সুস্থতা ও সংখ্যাবৃদ্ধির প্রয়োজনে অবিচ্ছেদ্য উপাদান – (১) নিউক্লিওটাইড ও (২) অ্যামিনো অ্যসিড এবং তাদের প্রকৃতি বৈচিত্র ও চিত্তাকর্ষক ছান্দিক তথ্যাবলী প্রসঙ্গ বস্তুতঃ, জীবের (মানুষ, অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ,
শেওলা, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, আরকিয়া, ভাইরাস প্রভৃতি) বংশগতির বা জন্মক্রমে প্রাপ্ত গুণাবলীর বাহক যে জীন তাদের গুচ্ছই হচ্ছে ডি. এন. এ. (
Deoxyribonucleic Acid,
DNA) অনু;
 তৈরী হয় – চার রকম নিউক্লিওটাইড দিয়ে:  অ্যাডিনীন (
A), গুয়ানীন (G),
থাইমিন (
T) ও সাইটোসীন (C)
প্রতিটি নিউক্লিওটাইডের আবার ৩টি অংশ:  নাইট্রোজেন যৌগ ভিত, রাইবোস্ শর্করা এবং মেরুদণ্ডরূপ ১ থেকে ৩ টি পর্যন্ত ফসফেট; প্রথাগতভাবে ভিতের নামেই বিশেষ একটি নিউক্লিওটাইডকে ডাকা হয় – অর্থাৎ ভিত চারটি:  অ্যাডিনীন, গুয়ানীন,
থাইমিন ও সাইটোসীন। কম-বেশী প্রায় ৬ ফুট একটি
DNAর অসংখ্য নিউক্লিওটাইডগুলি (উপরের চিত্রে কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে) মুখোমুখি জোড়ায় (A-T Base Pair)-জোড়ায় (G-C Base Pair) থেকে জোড়া-কম্বুরেখা (Helical Double Strands) বা লোহার পেঁচানো সিঁড়ীর মত হিষ্টোন আমিষ সহকারে অতি ক্ষুদ্র কুণ্ডলী পাকিয়ে একটি ক্রোমোসোম্ তৈরী করে – মানুষের প্রতি কোষ নিউক্লিউয়াসে এরূপ মা ও বাবার কাছে প্রাপ্ত ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম রয়েছে। একটি DNA-তে অসংখ্য জীন এবং একটি জীনে অসংখ্য নিউক্লিওটাইড
বর্তমান, উদাহরণ স্বরূপ,
CTTCGGATGCACGTAGGCTTC…ধরণের Codon ক্রমে থাকে – যার প্রতি ৩টির গুচ্ছকে আমিষ (যা পরবর্তী তালিকায় দেখানো অ্যামিনো অ্যাসিডগুলির বিবিধ সমাহার) প্রস্তুতির জন্য একটি কোডন বলে।

আদর্শ অ্যামিনো অ্যসিড (Standard Amino Acids) সমূহের তালিকা

নাম

সংক্ষিপ্ত নাম

(১-অক্ষরে)

mRNA-কোডন (সাধারনক্ষেত্রে)

এককভাবে কার্যকারিতা

আনবিক ভর

আনবিক কাঠামো

ফিনাইলএলানাইন

(Phenylalanine)

PHE

(F)

UUU & UUC

টাইরোসাইন (যা মস্তিষ্কের দরকারী
L-dopa, epinephrine, norepinephrine
ইত্যাদি এবং thyroid hormone – রাসায়নিকের কাঁচামাল) প্রস্ততে কাজে লাগে

১৬৫.২

লিউসিন

(Leucine)

LEU

(L)

UUA, UUG, CUU, CUC, CUA & CUG

পেশী ও অস্থি কলার জন্য আমিষ তৈরী করতে 
আইসোলিউসিন ও ভ্যালাইনের সহযোগী
বৃদ্ধির হরমোন তৈরীরও সহায়ক

১৩১.২

আইসোলিউসিন

(Isoleucine)

Ile

(I)

AUU, AUC &

AUA

বিভিন্ন  পেশীর জন্য আমিষ তৈরী করতে  লিউসিন ও ভ্যালাইনের সহযোগী পেশীর ক্ষয় পুরণের সাথে সেখানে শক্তিও যোগায়

১৩১.২

মেথিওনাইন

(Methionine)

MET

(M)

AUG

 (আরম্ভ সূচকও)

সিষ্টাইনের  মতই সালফার যুক্ত এবং কার্ণিটাইন, মেলাটোনাইন প্রভৃতি আমিষ তৈরীতে দরকারী

১৪৯.২

ভ্যালাইন

(Valine)

VAL

(V)

GUU, GUC, GUA & GUG

বিভিন্ন পেশীর জন্য আমিষ তৈরী ও বল সরবরাহ এবং  শরীরের নাইট্রোজেন ভারসাম্য রক্ষা করে৷

১১৭.১

সিরাইন

(Serine)

SER

(S)

UCU, UCC, UCA, UCG,  AGU & AGC

মস্তিষ্কের
কাজের জন্য,
DNA, RNA,  কোষ-প্রাচীর ও পেশী তৈরীতে ও শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা গ়ড়তে গুরুত্ব পূর্ণ৷

১০৫.১

প্রোলাইন

(Proline)

PRO

(P)

CCU, CCC, CCA & CCG

গঠন বৈচিত্রের জন্য আমিষ তৈরীতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে – 
ঔষধ শিল্পেও
 L-Proline-এর ব্যাপক ব্যবহার হয়৷

১১৫.১

থ্রিওনাইন

(Threonine)

THR

(T)

ACU, ACC, ACA & ACG

সিরাইন ও গ্লাইসিন (বহু দরকারী Collagen Elastin আমিষ এবং পেশীকলা গঠনে সহায়ক) তৈরীর কাঁচামাল

১১৯.১

এলানাইন

(Alanine)

ALA

(A)

GCU, GCC, GCA & GCG

শরীরে একদিকে গ্লুকোজ শর্করার এবং অন্যদিকে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ সহায়ক

৮৯.১



নাম

সংক্ষিপ্ত নাম

(১-অক্ষরে)

mRNA-কোডন (সাধারনক্ষেত্রে)

এককভাবে
কার্যকারিতা

আনবিক ভর

আনবিক কাঠামো

টাইরোসাইন

(Tyrosine)

TYR

(Y)

UAU & UAC

মস্তিষ্কের কার্যাবলী সহায়ক – বিশেষতঃ স্নায়ুর পরিচালনা ক্রিয়ার জন্য বহু রাসায়নিকের কাঁচামাল

১৮১.২

সমাপ্তিসূচক
(STOP)

STOP

UAA

(Ochre Codon)

তিনটি সমাপ্তি সূচক কোডনের নাম করণ করা হযেছে:  Ochre (UAA),   Amber (UAG)  এবং   Opal  বা  Umber (UGA).

পাইরোলাইসিন

(Pyrrolysine)*

PYL

(O)

STOP

UAG *

(Ambar Codon)

* কেবলমাত্র কিছু আদিম জীবের ক্ষেত্রে (যেমন এককোষী  বিশেষ   আরকিয়া, Archaea) দরকারী, অন্যক্ষেত্রে সমাপ্তি সূচক

২৫৫.৩

হিষ্টিডাইন

(Histidine)

HIS

(H)

CAU & CAC

লোহা ও তামা সহ বিভিন্ন ধাতু আমিষে সংযোগকারী ও পরিবহনক্ষম – রক্তক্ষরণরোধ ও ডাইরিয়া প্রতিরোধেও কার্যকরী
ভূমিকা আছে

১৫৫.২

গ্লুটামাইন

(Glutamine)

GLN

(Q)

CAA & CAG

কোষে আমিষ ও স্নেহপদার্থ সংশ্লষণ প্রকৃয়ায়, অম্ল-ক্ষার ভারসাম্য রক্ষায়, প্রতিরোধ ক্রিয়ায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে – পেশীতে তৈরী হয়

১৪৬.১

অ্যাসপারাজাইন

(Asparagine)

ASN

(N)

AAU & AAC

গ্লাইকোপ্রোটিন সহ আমিষ সংশ্লেষণে কার্যকরী ভূমিকা – কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায়ও এর ভূমিকা রয়েছে

১৩২.১

লাইসিন

(Lysine)

LYS

(K)

AAA & AAG

পেশী কলায় বেশী থাকে – ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণে,  কোলাজেন আমিষ ও সংযোগকারী
কলা গঠনে ও স্নেহ পদার্থ থেকে শক্তি তৈরীতে বিশেষ দরকারী

১৪৬.২

অ্যাসপারটিক অ্যাসিড

(Aspartic Acid)

ASP

(D)

GAU & GAC

বেশ কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড ও Nucleotides
সংশ্লষণে প্রয়োজনীয় –  স্নায়ু রসায়ণতন্ত্রেও বেশ ভূমিকা রয়েছে

১৩৩.১

গ্লুটামিক অ্যাসিড

(Glutamic Acid)

GLU

(E)

GAA & GAG

সুস্থ মস্তিষ্ক গঠনে বিভিন্ন স্নায়ুপরিচালক রাসায়নিক, পেশী ও আমিষ তৈরীতে ও 
স্নায়ুপরিচালন কাজে 
সরাসরি ও কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে

১৪৭.১

সিষ্টাইন

(Cysteine)

CYS

(C)

UGU & UGC

আমিষ গঠনে পারস্পরিক দৃঢ়-বন্ধন সৃষ্টিতে ও নখ, চুল, চামড়া গঠনে কেরটিন রাসায়নিকের বিশেষ উপাদান

১২১.২

সেলেনোসিষ্টাইন

(Selenocysteine)*

SEC

(U)

STOP

UGA *

(Umbar or Opal Codon)

সেলেনোপ্রোটিন তৈরীতে ও কিছু আদিম এককোষী জীবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সাধারণক্ষেত্রে সমাপ্তি সূচক

১৬৭.

 

ট্রিপটোফ্যান

(Tryptophan)

TRP

(W)

UGG

ভিটামিন বি৩ এবং অতঃপর সিরোটোনিন নামক (মেজাজ ও ঘুম নিয়ন্ত্রক) স্নায়ুপরিচালকপাদনক্ষম

২০৪.২

আরগিনাইন

(Arginine)

ARG

(R)

CGU, CGC, CGA, CGG, AGA & AGG

নাইট্রিক অক্সাইড (NO, যা স্নাযু ক্রিয়ায়,  রক্ত সংবহনে ও চুলের জন্য উপকারী) প্রস্তুতিতে, দেহের অ্যামোনিয়া বের করতে ও  কিছু রাসায়নিক বস্তু তৈরীতে  দরকার

১৭৪.২

গ্লাইসিন

(Glycine)

GLY

(G)

GGU, GGC, GGA & GGG

সিরোটোনিনের মত মস্তিষ্কের উত্তেজনা হ্রাসকর কেন্দ্রীয় ও সুসুম্মা কাণ্ডের  স্মায়ু ও পাচন-তন্ত্র
সহ নানা পরিচালন  সহায়ক

৭৫.১

আমিষ (Protein, Polypeptide – অর্থা অ্যামিনো অ্যাসিডগুলির সমাহারে গঠিত রাসায়নিক যৌগ) অনু তৈরী হয় কোষাভ্যন্তরের রাইবোজোম (যেগুলিকে আবার কোষের নিউক্লিয়াসের
অন্তর্গত নিউক্লিওলাস্ উপাঙ্গ উৎপাদন করে) নামক উপাঙ্গে, পরে কোষেরই অন্য একটি উপাঙ্গ গলজী অ্যাপারেটার্সে পরিমার্জিত ও প্যাকিং হলে প্রয়োজনানুসারে যথাস্থানে পাঠানো হয়। DNA-তে সংরক্ষিত বিভিন্ন জীনের নিউক্লিওটাইড সমষ্টি থেকে mRNA নামক এক ধরণের Messenger-RNA (Ribonucleic Acid) অনু প্রাসঙ্গিক কোডন-গুচ্ছগুলি সংগ্রহ (Transcription) করে রাইবোজোমে বয়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে tRNA নামক এক ধরণের Transfer-RNA অনু (তালিকায় দেখান কোডন অনুসারে) যথারীতি নির্ভুলভাবে অনুবাদ (Translation)সম্পাদন করে উপযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড চয়ন পূর্বক তাদের গ্রথিত করে (Peptide Bonding) এবং যখন যেরূপ প্রয়োজন সেরূপ আমিষ প্রস্তুতিতে সক্রিয় অংশ নেয় এতদ্বিষয়ে জ্ঞাতব্য যে –

(১) RNA, DNA-এর মতই; কিন্তু RNA এক কাঠামো (Strand) যুক্ত অপেক্ষাকৃত ছোট অনু এবং RNA-এর ক্ষেত্রে থাইমিনের পরিবর্তে ইডরেসিল(U) নামক সামান্য ভিন্ন নিউক্লিওটাইড থাকেশরীরের বাইরেও (in vitro) ইউরিয়া থেকে ইউরেসিল প্রস্তুত করা হয়ে থাকে DNA দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু RNA ক্ষণস্থায়ী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সমস্ত শারীর-বৃত্তিয় প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা সহকারে একাধিক ভিডিও Google কোম্পানীর মালিকানাধীন YouTube-এ অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে – অধিকাংশ ভিডিওর দ্রুতি ও তীক্ষ্ণতাও বদলে দেখা ও শোনা যায় – আবার নিজের ভিডিও আপলোডও করা যায় (সুতরাং এটি এমন একটি সংস্থা-মাধ্যম যেখানে আমরা আমাদের কীর্তি নিজের ও অন্যের ভবিষ্য ব্যবহারের জন্য ভিডিও আকারে বিনা ব্যয়ে নিশ্চিন্তে সংরক্ষিত করে রাখতে পারি)।

(২) তালিকাটিতে কোডনগুলির বিন্যাস নিবিষ্ট মনে নিরীক্ষণ করলে মনে হয় না কি অতি ক্ষুদ্র কোষাভ্যন্তরের ততোধিক ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসে ও রাইবোজোমেও কিরূপ সা-রে-গা-মা-র স্বরলিপি অনুরণিত হচ্ছে মুহুর্তে লক্ষ-লক্ষ চরণে? আরও লক্ষনীয় যে, প্রোলাইন ছাড়া প্রত্যেকটি অ্যামিনো
অ্যাসিডের শুরুর (তালিকাটিতে হাল্কা রঙে ঘেরা নাই যে অংশ) মূল অঙ্গার (
C, Carbon) পরমানুর তিন পাশে হাইড্রোজেন সহ ৩ টি দলে (Group) মোট ৯ টি পরমানু একই কাঠামো অনুসরণ করে বিরাজ করছে – বিশ্বের
সকল জীবেই – অপুর্ব নান্দনিক মিল! তাই না
?

(৩) উল্লেখ্য যে, আমিষ ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধন বা শক্তির অন্যতম উস হিসাবেই যে কেবলমাত্র দরকার তা ঠিক নয় – শারীর-বৃত্তিয় প্রায় সমস্ত স্তরেই আমিষের ভূমিকা রয়েছে। যেমন, অনুঘটক হিসাবে জারন-বিজারণ, সংশ্লেষণ-বিশ্লেষণ এবং সমস্ত শারীর-বৃত্তিয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত করণ দায়িত্বে যে সব জারকরস বা এনজাইম (পাশের PDB Code: 5MBH নির্দিষ্ট PDB Database থেকে সংগৃহিত ‘Structure of a Bacterial Light-regulated Adenylyl Cyclase’ Enzyme-এর চিত্রটি দেখলে মনে হয় না কি – কি দৃষ্টিনন্দন রূপ!) ও হরমোন নিরতঃ ব্যস্ত সে সবই আমিষ, রক্তের লোহিত কণিকাও আমিষ আবার সাপের বিষও আমিষ – বিদেশে তো বিভিন্ন শারীর-বৃত্তিয়
প্রক্রিয়া ও তার ছন্দের উপর এমন কি জারক রসের উপর খুবই সুন্দর সুন্দর গান রচনা হয়েছে (এদেশে কোন ভাষাতেই তা পাওয়া যায় না! – তবে বাউল সম্প্রদায়ের গায়কেরা একটু শিক্ষা পেলেই নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে) এবং সেই সব গান ভাল শিল্পিরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতস্ফুর্ত ও সাবলীল ভঙ্গিমায় নৃত্য সহকারে গান – এমন কি অধ্যাপকেরাও অনেকে সেই গান গেয়েই শেখান – এরূপ বহু গান Video Song on … পরিচয়ে YouTube-এ লভ্য (যেমন, https://www.youtube.com/watch?v=NdMVRL4oaUo)

(৪) তালিকাটিতে অ্যামিনো অ্যাসিডগুলির যে আনবিক কাঠামো দেখানো হয়েছে তা সম্যক বুঝতে যে যে কোণায় পরমানুর চিহ্ণ নেই সেই কোণায় কার্বন (C) আছে ধরতে হবে এবং কার্বনের যোজ্যতা ৪ ধরে হাইড্রোজেন (H, যোজ্যতা ১) বসবে – গন্ধক (S) ও অক্সিজেন (O)-এর যোজ্যতা ২ ও নাইট্রোজেন(N)-এর যোজ্যতা ৩

(৫) তালিকাটিতে প্রদর্শিত হয়েছে মোট সরাসরি আমিষ প্রস্তুতে অংশ গ্রহণকারী (যদিও আরও অসংখ্য অন্যান্য
অ্যামিনো অ্যাসিড, লাইগ্যাণ্ড নামক যৌগ, অল্প কিছু ধাতব ও অধাতব মৌল প্রভৃতিও অনুবাদোত্তরকালে যুক্ত হতে পারে) এখনও পর্যন্ত আবিস্কৃত কোডন সম্বলিত ২২ টি অ্যামিনো অ্যাসিড। আসলে, এদের মধ্যে ২০ টিকে (অর্থা
সেলেনোসিস্টাইন ও পাইরোলাইসিন বাদে) সাধারণ ও আদর্শ অ্যামিনো অ্যাসিড বলা হয়। ঐ ২০ টির মধ্যে ৯ টিকে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো
অ্যাসিড (ফিনাইলএলানাইন, লিউসিন, আইসোলিউসিন, মেথিওনাইন, ভ্যালাইন, থ্রিওনাইন, হিস্টিডাইন, লাইসিন, ও ট্রিপটোফ্যান – এ গুলি মানবদেহে তৈরী হয় না, খাদ্যে গ্রহণ করতে হয়)
 বলে এবং ৭ টিকে শর্তাধীন অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড (সিরাইন, প্রোলাইন, টাইরোসাইন, গ্লুটামাইন, সিস্টাইন, আরগিনাইন ও গ্লাইসিন – এ গুলি অসুস্থতায়, বার্ধক্যে, প্রসূতিকালে ও শৈশবে মানবদেহে তৈরী হয় না)  বলে।

(৬) DNA-এর অনেক জীনে নিউক্লিওটাইডগুলি ৩য় অনুচ্ছেদে দেওয়া উদাহরণের মত অর্থপূর্ণভাবেই Palindrome (যে শব্দ, পংক্তি প্রভৃতি উল্টা দিক থেকে পড়লেও একই থাকে, যেমন, জলজ; madam; সংস্কৃতে: माययाक्षमसमक्षयायमा।  আরবিতে: رَبَّكَ فَكَبِّرْচীনায়: 文言文 মৌলিক সংখ্যা: ১৯১, ৩১৩ ইত্যাদি; আরও জানতে হলে: বাংলা সাহিত্যে – (ক), (খ), (গ) প্রভৃতি এবং সংস্কৃত সাহিত্যে – (क), (ख) প্রভৃতি)-রূপে ছন্দবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। ডি.এন.এর সহযোগী কাঠামো (Complimentary Strand) অংশও উল্টোদিক থেকে সমান সংখক নিউক্লিওটাইড Palindrome গঠন করে। পাশের চিত্রে ডি.এন.এর একটি অংশে এইরূপ Complimentary Strand Palindrome দেখান হল। এই বিষয়ে CRISPR (Clustered Regularly Interspaced Short Palindromic Repeat)-Cas9 and Targeted Genome Editingগবেষণা ও তার প্রয়োগে কর্কট সহ জীন ঘটিত বিভিন্ন ব্যাধি চিকিসায় অতি সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নীচে চিত্রে প্রক্রিয়াটির আধুনিক ধারণাটি দেখান হলঃ-


2 thoughts on “জীবদেহের গঠন বিষয়ে স্বল্প আলোচনা ও সংগৃহিত কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য”

  1. বিষয়টি যেহেতু এক্কেবারেই প্রাথমিক ধারণা সম্পর্কীয় তবুও সৃজনশীল মন্তব্য সাগ্রহে আহ্বান করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *