চিনি তথা মিষ্ট খাদ্য থেকে বয়স্করা সাবধান! –অতিরিক্ত শর্করা থেকে দেহে তেল-চর্বি সংশ্লেষণ

চিনি তথা মিষ্ট খাদ্য থেকে বয়স্করা সাবধান – অতিরিক্ত শর্করা থেকে দেহে তেল-চর্বি সংশ্লেষণ

চিনি তথা মিষ্ট খাদ্য থেকে বয়স্করা সাবধান!

অতিরিক্ত শর্করা থেকে দেহে তেল-চর্বি সংশ্লেষণ


     
ড. সুবোধ চন্দ্র গরাই


গ্লিসারেল্ডিহাইড্ সাধারণ চিনি (সুক্রোজ্) মল্টোজ্


          অধুনা  সামাজিক  মাধ্যম  হিসাবে অগ্রগণ্য ফেসবুকএ সম্প্রতি প্রচারিত প্রোথিতযশা ডাক্তার ডক্টর অভিজিৎ চৌধুরী (MD,  DNB,  DM;
 Professor  &  Head  of the  Department of Hepatology, Institute of   Post  Graduate  Medical  Education  &  Research,   Kolkata
)এর  স্বাস্থ্য   নিয়ে   দুর্দান্ত   ও   আলোকপ্রদ বিবৃতি (সংগৃহিত সংশ্লিষ্ট লিঙ্কটি হলঃ  https://www.facebook.com/anjan.mandal.921/videos/2132249987030449/   অথবা https://www.youtube.com/watch?v=FPkukpa1brM) থেকে জানা গেল যে যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া (“Fatty Lever” Disease) বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও ভীষণ বিপজ্জনক যা চলতে থাকলে বহুমুত্র (Diabetes) হৃদরোগ (Heart Disease)এর সমুহ সম্ভাবনা সৃষ্টি করে; অথচ ডাক্তারবাবুর অভিমতে এই ফ্যাটি লিভার অসুখটির এযাবৎ কোন ঔষধ পাওয়া যায় না – যদিও
তাঁর মতে ঐ ঔষধ অদূর ভবিষ্যতে মিলতে পারে
তিনি জানিয়েছেন যে, এই অসুখটি প্রধানতঃ তথাকথিত নধর দেহের অধিকারী সুখী ব্যক্তিদের এবং এই অসুখটির মূল কারণ মাত্রাতিরিক্ত তেল তথা চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ যা দেহের পক্ষে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় লিভার (তাছাড়াও ভুঁড়ি ও অন্যান্য বিভিন্ন অঙ্গের কলা সমূহ)-এ ভবিষ্যতে বিপদ সম্ভাবনাকরভাবে জমতে থাকে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, এই অসুখটি থেকে নিস্তার পাওয়ার বর্তমানে একমাত্র উপায় কঠোর পরিশ্রম বা ব্যায়াম এবং সর্বতোভাবে তেল-চর্বি বর্জন।

          কিন্তু চিনি তথা শর্করা জাতীয় খাদ্যগুলিও লিভারে এনজাইম বা উৎসেচকের সাহচর্যে শারীরবৃত্তিয় ক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে পর্যায়ক্রমে ফ্যাটি অ্যাসিড্ তথা লিপিড্ বা তেল-চর্বি (বেশি কার্বন সম্বলিত ফ্যাটি অ্যাসিড্ নামক যৌগগুলিকেই সাধারণ তাপমাত্রায় চর্বি বলে গণ্য করা হয়) তৈরী করে। আবার, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি হল যৌগে অন্তর্ভূক্ত কার্বনগুলির এক বা একাধিক স্থানে যে যে ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির দ্বি-বন্ধনী বা Double Bond থাকে সেগুলি যেমন, সরষের তেল-এর উপাদান সমূহের মধ্যে ১২% সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির সঙ্গে আবশ্যকীয় (যেহেতু মানবদেহে তৈরী হয় না) Oleic Acid, Linoleic Acid Alpha-Linolenic Acid নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি কম-বেশি যথাক্রমে ১২ %, ১৫ % ও ৬ % রয়েছে এবং তাদের যথাক্রমে ১ টি,
২ টি ও ৩ টি
C=Cদ্বি-বন্ধনী রয়েছে জৈব-অ্যাসিডের পরিচায়ক কার্বক্সি মূলকেকার্বন থেকে গণনা করলে যথাক্রমে ৯-১০ নং কার্বনে, ৯-১০ ও ১২-১৩ নং কার্বনে এবং ৯-১০, ১২-১৩ ও ১৫-১৬ নং কার্বনে – এছাড়াও ১৩-১৪ নং কার্বনে অর্থাৎ ১টি দ্বি-বন্ধনযুক্ত ২২-কার্বনের Erucic Acid থাকে ৪২% (তথ্যসূত্র)। বিশেষতঃ সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি আবার অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির তুলনায় প্রধানতঃ ঐ নধর দেহের অধিকারীদের ক্ষেত্রে অধিকতর ক্ষতিকারক। ডাক্তার ড. চৌধুরীকে অসংখ্য ধন্যবাদ! তবে, এই প্রক্রিয়াটির কথা মাথায় রেখে তিনি অবশ্য চিনি তথা শর্করা জাতীয় খাবারগুলির (একই অসুখের কারণ হিসাবে) অশুভ প্রভাবটিকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন নাই অথবা ওগুলির বিরূদ্ধে সাবধান বানী উচ্চারণের বিষয়টি তাঁর স্মরণে ছিল না।
           জল, ঔষধমাদকদ্রব্য বাদ দিলে মানুষ যে সকল খাদ্য গ্রহণ করে তা মূলতঃ দুই শ্রেণীরঃ (ক) প্রাথমিক খাদ্য
(Primary Metabolites) যথা (১) শর্করা (Carbohydrates), ২) স্নেহ (Fats, Lipids or Fatty Acids ) ও (৩) আমিষ (Proteins) জাতীয় খাদ্যসমূহ এবং (খ) গৌণ তথা আনুষঙ্গিক খাদ্য (Secondary Metabolites) সমূহ। প্রথম শ্রেণীর খাদ্যগুলির অন্তর্গত শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাবারগুলি প্রধানতঃ শরীরাভ্যন্তরস্থ যন্ত্রাদি সচল রাখার ও জৈবরাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্যই হৌক আর জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনেই হৌক শক্তি উৎপাদনে দরকার (যদিও প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকেও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে শক্তি উৎপাদিত হতে পারে)। আর (মূলতঃ অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির সমাহার) পলিপেপটাইড্(Polypeptide) বা প্রোটিন তথা আমিষ জাতীয় খাদ্যসমূহ প্রধানতঃ ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও পরিপাক সহ বিবিধ শারীরবৃত্তিয় ক্রিয়া (Metabolic Processes)-এর জন্য আবশ্যকীয় উৎসেচক তথা জারক রস (Enzyme) সরবরাহের জন্য প্রয়োজন। দ্বিতীয় শ্রেণীর (যার মধ্যে বিভিন্ন ধাতু, অন্যান্য খনিজ পদার্থভিটামিনগুলিকেও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে) খাদ্য সমূহের গুরুত্বও অপরিসীম (বিশেষতঃ বয়স্কদের জন্য) কারণ সুস্বাস্থের জন্য অর্থাৎ শরীর সুস্থ রাখতে তথা বিবিধ রোগ প্রতিরোধ করতে আনুষঙ্গিক খাদ্য (Secondary Metabolites)-গুলির অগণিত ভূমিকা রয়েছে। দেহাভ্যন্তরস্থ কিছু জৈবরাসায়নিক পদার্থ (যেমন, Dopamine, Serotonin, AcetylCholine, GABA অর্থাৎ Gamma-AminoButyric Acid, Oxytocin, Somatostatin ইত্যাদি Neurotransmitters এবং Hexanal, Decanal, Isovaleric Acid, 6-Methyl-3-Hepten-2-One ইত্যাদি Human Kairomones প্রভৃতি) আবার স্নায়ু-মাধ্যমে সংকেত তথা সংবাদ আদান-প্রদানের (Neurotransmitters বা Semiochemicals) জন্যও ভূমিকা পালন করে এবং এগুলিও বিবিধ খাদ্য থেকে পাওয়া যায় (যেমন, কলা থেকে Norepinephrine, Serotonin, Dopamine) বা এনজাইমের সহযোগিতায় দেহে তৈরী (যেমন, অগ্রজ প্রোটীন Proopiomelanocortin, POMC থেকে সম্মুখ পিটুইটারী গ্রন্থীতে প্রধানতঃ সংশ্লেষণ ও সঞ্চিত হয় Beta-Endorphin-গুলি) হয়। শর্করা জাতীয় জৈব
যৌগগুলি হলঃ সেলুলোজ্
, শ্বেতসার বা স্টার্চ এবং 
ইক্ষু-শর্করা সহ ৩-কার্বন বিশিষ্ট সরলতম গ্লিসারেলডিহাইড্ (Glyceraldehyde)
থেকে আরম্ভ করে অসংখ্য প্রকারের অধিকতর বেশি কার্বন যুক্ত সরল ও জটিল রাসায়নিক গঠন সমন্বিত বিভিন্ন ধরণের চিনি এদের মধ্যে সেলুলোজ্ মনুষ্যেতর বেশ কিছু জীব হজম করতে পারলেও আমাদের হজমের অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিকর নয়।


        এক্ষণে, বর্তমান প্রবন্ধটির মূল প্রসঙ্গে অর্থাৎ, কিভাবে শর্করা তথা চিনি থেকে তেল বা চর্বি শরীরে উৎপন্ন হয় সেই প্রসঙ্গেই আসা যাক।  আসলে আমরা শর্করা প্রধান যে সকল খাদ্য (যেমন, ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি) গ্রহণ করি তাদের প্রায় সবটাই স্টার্চ নামক একপ্রকার জটিল শর্করা এবং ঐরূপ জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্য মুখে চিবানোর সময় মুখের লালার অন্যতম উপাদান একপ্রকার উৎসেচকের প্রভাবে জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় (Hydrolysis by Salivary
Amylases) ঐ স্টার্চের অনেকটাই সরল চিনিতে তথা প্রথমে মল্টোজ (Maltose, Disaccharide) এবং পরবর্তীকালে পরিপাক প্রণালীতে বাকী প্রায় সবটা জটিল শর্করাই গ্লুকোজ (Glucose), ফ্রুক্টোজ ইত্যাদি অধিকতর সরল চিনি জাতীয় যৌগ (Monosaccharide)-এ পরিণত হয়। কিন্তু আমাদের শরীরে অধিক গ্লুকোজ জমা করে রাখার ব্যবস্থা নাই তাৎক্ষণিক শক্তির প্রয়োজনে ওজন ও স্বাস্থ্যের সাপেক্ষে মূলতঃ আমাদের যকৃত (Liver) এবং পেশী (Muscle) যথাক্রমে ৭৫-১০০ গ্রাম এবং ২৫০-৪০০ গ্রাম সামান্য জটিল গ্লাইকোজেন (Glycogen) নামক শর্করায় (অন্য উৎসেচক বা Enzyme, Glycogen synthase তথা UDP-Glucose-Glycogen Glucosyltransferaseএর সহযোগিতায়) রূপান্তরিত করে জমিয়ে রাখতে পারে পরবর্তীকালে আবার শক্তির প্রয়োজনে ঐ গ্লাইকোজেন ভিন্ন উৎসেচক বা এনজাইম (Glucokinase বা Hexokinase)-এর সহযোগিতায় আমাদের লিভার ও পেশীকোষ আবার গ্লুকোজে পরিণত করতে পারে। সুতরাং, অতিরিক্ত গ্লুকোজকে প্রধাণতঃ লিভার রূপান্তরিত করে তেল বা চর্বিতে যার সাধারণ জৈবরাসায়নিক নাম ফ্যাটি অ্যাসিড্ (Fatty Acid, যেমন, ১৬ কার্বনের Palmitic Acid, ১৮ কার্বনের Stearic Acid ইত্যাদি সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড্)ঐ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি প্রধানতঃ ভুঁড়ি তথা অ্যাডিপোজ্ (Adipose) নামক কলায় গ্লিসারিন বা গ্লিসারল (Glycerol) নামক অ্যালকোহলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ট্রাইগ্লিসারাইড্ (Triglyceride) নামক জৈব যৌগ গঠন করে জমা হতে থাকে যদি প্রয়োজন আদৌ হয় তবে তা থেকে আবার যেভাবে (অর্থাৎ Beta Oxidation নামক প্রক্রিয়ায়) ভুক্ত তেল থেকে তৈরী হয় সেভাবেই শক্তি-ধারক রাসায়নিক যৌগ এ. টি. পি (ATP, Adenosine
Triphosphate
) তৈরী হতে পারে

গ্লুকোজ থেকে তেল (মূলতঃ যকৃত বা লিভারের হেপাটোসাইট অর্থাৎ Hepatocyte নামক বিশেষ কোষে) বেশ কয়েকটি পর্যায়ে রূপান্তরিত হয় এবং প্রতিটি পর্যায় আবার কয়েকটি ধাপে বিভক্ত পদ্ধতিটি (অনুরূপ আলোচনা পাওয়া যাবে এরূপ একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত উৎস হলঃ https://www.slideshare.net/drpriyankaclre/carbohydrate-metabolism-31202554?fbclid=IwAR3cbm15wGWZiUtjj3RPJHPc3d7xNkYW0sOELgvrors_4NZ7ARUrw8lQKII এবং Youtubeএও অনুরূপ আলোচনা সমন্বিত বহু ভিডিও পাওয়া যাবে) পরবর্তী অনুচ্ছেদগুলিতে
অল্প-বিস্তর বিবৃত করা হল।


গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis) প্রক্রিয়ার ধাপগুলি

10 Steps of Glycolysis

          প্রথম পর্যায়ে গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis) নামক প্রক্রিয়া এবং এটি মোট ১০ টি ধাপে সংঘটিত হয় কোষের সাইটোসোল অঞ্চলে ১ অনু গ্লুকোজ থেকে শুরু হলে প্রক্রিয়া শেষে উৎপন্ন হয় ২ অনু ৩-কার্বনের পাইরুভেট তথা পাইরুভিক অ্যাসিড (অর্থাৎ, AcetylFormic Acid)সঙ্গের চিত্রটিতে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হল (লিঙ্কটি হলঃ http://www2.csudh.edu/nsturm/CHE452/01_Glycolysis.htm)ধাপগুলি [সংশ্লিষ্ট এনজাইমের নাম তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে] হলঃ ১ অনু গ্লুকোজ (Glucose) [হেক্সোকাইনেজ] ১ খানা এ. টি. পি. খরচ করে ১ অনু গ্লুকোজ-৬-ফসফেট (Glucose-6-Phosphate) [ফসফোগ্লুকোজ আইসোমারেজ] ১ অনু ফ্রুক্টোজ-৬-ফসফেট (Fructose-6-Phosphate) [ফসফোফ্রুক্টোকাইনেজ] ১ খানা এ. টি. পি. খরচ করে ১ অনু ফ্রুক্টোজ-১,৬-বিশ্ফসফেট (Fructose-1,6-Bisphosphate) [অল্ডোলেজ্] এরপর ২টি শাখায় (১) ১ অনু গ্লিসারেল্ডিহাইড-৩-ফসফেট (Glyceraldehyde-3-Phosphate) এবং (২) ১ অনু ডাইহাইড্রোক্সিঅ্যাসিটোন ফসফেট্ (DihydroxyAcetone Phosphate) [ট্রাইয়োজফসফেট আইসোমারেজ্] গ্লিসারেল্ডিহাইড-৩-ফসফেট (Glyceraldehyde-3-Phosphate) (অর্থাৎ, মোট ২ অনু) [গ্লিসারেল্ডিহাইড-৩-ফসফেট ডিহাইড্রোজেনেজ্] (এই ধাপের প্রয়োজনে ২ টি অজৈব ফসফেট আয়ন ও ২ টি NAD+ আয়ন গ্রহণ করে এবং বিক্রিয়া শেষে ২ অনু NADPH
ও ২ টি আয়নিত হাইড্রোজেন H+ উপজাত হিসাবে লব্ধ হয়) ২ অনু ১,৩-বিশফসফোগ্লিসারেট্ (1,3-BisphosphoGlycerate) [ফসফোগ্লিসারেট কাইনেজ্] ২ অনু ৩-ফসফোগ্লিসারেট (3-PhosphoGlycerate) এবং ২ খানা এ. টি. পি. জমা করে [ফসফোগ্লিসারোমিউটেজ্] ২ অনু ২-ফসফোগ্লিসারেট (2-PhosphoGlycerate) [এনোলেজ্] ২ অনু ফসফোএনোলপাইরুভেট (PhosphoenolPyruvate) [পাইরুভেট কাইনেজ্] ২ অনু পাইরুভেট্ বা পাইরুভিক অ্যাসিড্ (Pyruvate বা Pyruvic Acid অর্থাৎ সেই AcetylFormic Acid) এবং আরও ২ খানা এ. টি. পি. জমা করে অর্থাৎ, বাড়তি লাভ, শক্তি অনু হিসাবে নীট ২ খানা এ. টি. পি. (ATP, Adenosine Triphosphate) এই পর্যায়ে পাওয়া যায়।


   দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি ঘটে কোষের মাইটোকনড্রিয়ন (
Mitochondrion)-এ
র এক্কেবারে ভিতরে ম্যাট্রিক্স অঞ্চলে এবং ঐ ২ অনু পাইরুভেট্ বা পাইরুভিক অ্যাসিড্ অর্থাৎ AcetylFormic Acid (প্রত্যেকটি থেকে ১ পরমাণু কার্বন বর্জন করে মোট ২ অনু কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দিয়ে) Pyruvate Dehydrogenase Complex নামক তিনটি এনজাইম-গুচ্ছের সহযোগিতায় এবং সহযোগী-উৎসেচক তথা কো-এনজাইম-এ (Coenzyme A সংক্ষেপে CoA)-এর ২ অনুর সাহায্য নিয়ে মোট ২ অনু অ্যাসিটাইল্-কোএ (Acetyl-CoA) তৈরী করে – এখানে মোট ২ অনু NADPH (বিজারিত নিকোটিনামাইড অ্যাডিনীন ডাইফস্ফেট্, Reduced Nicotinamide Adenine Diphosphate) এবং ২ খানা আয়নিত H+ও তৈরী হয় যা পরে ফ্যাটি অ্যাসিড্ প্রস্তুতকালে ২ বার বিজারণ বিক্রিয়া সম্পাদনার্থে (এবং ক্রেব্স্ চক্রের পরবর্তী সবাত শ্বসন পদ্ধতির শেষ পর্যায় অর্থাৎ Electron Transport Chain পর্যায়ে এ. টি. পি. তৈরীতে) কাজে লাগে। এই Acetyl-CoA অনু পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ ক্রেব্স্ চক্র তথা Krebs Cycle বা Tricarboxylic Acid Cycle (Citric Acid Cycle)-এর প্রারম্ভিক কাঁচামাল (Substrate) হিসাবেও ব্যবহৃত হয় এবং অধিকতর সংখক এ. টি. পি. এই ক্রেব্স্ চক্রটি থেকেই তৈরী হয়

   তৃতীয় তথা শেষ পর্যায়ে ঐ অ্যাসেটাইল-কোএ ও তা থেকে উৎপন্ন (অ্যাসেটাইল-কোএ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড্ থেকে উৎপন্ন বাইকার্বোনেট্ এ. টি. পি.-র থেকে শক্তি নিয়ে ও অ্যাসেটাইল-কোএ কারবোক্সিলেজ নামক এনজাইমের বিশেষতঃ বায়োটিনের সাহচর্যে তৈরী) ম্যালোনাইল-কোএ (Malonyl-CoA) দিয়ে শুরু হয়ে তৈরী হয় অধিকতর বেশী কার্বন পরমানু সমন্বিত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি, শারীর-বৃত্তীয় এক বিশেষ সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার পরম্পরাক্রমে। এই প্রক্রিয়াটি ঘটে কোষের সাইটোসোলে – যদিও অ্যাসিটাইল-কোএ তৈরী হয় কোষের মাইটোকনড্রিয়নে তবে সেখানেই ঐ ক্রেব্স্ চক্রটির প্রথমদিকে যে অক্সালো-অ্যাসিটেটের সঙ্গে অ্যাসিটাইল-কোএ যুক্ত হয়ে সিট্রেট (বা সাইট্রিক অ্যাসিড, Citric Acid) তৈরী করে তা মাইটোকনড্রিয়ন থেকে পরিবাহিত হয়ে সাইটোসোলে বের হয়ে আবার অক্সালো-অ্যাসিটেট ও অ্যাসিটাইল-কোএ আলাদা হয়ে যায়, Carnitine Acetyl Transferases নামক উৎসেচকগুলি এই পরিবহনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং এই পরিবহন ব্যবস্থাটিকে Tricarboxylate Anion Carrier System আখ্যা দেওয়া হয় এই প্রক্রিয়াটি সম্পাদনে বিভিন্ন জারক রস বা এনজাইমের উপস্থিতি যেমন প্রয়োজন তেমনই প্রত্যেক পরম্পরায় যে দুই বার (২ পরমাণু করে হাইড্রোজেন যুক্ত করার প্রয়োজনে) বিজারণ পদ্ধতির সম্মুখীন হতে হয় সেই সময় এন্. এ. ডি. পি. এইচ্. (বিজারিত নিকোটিনামাইড্ অ্যাডিনীন ডাইনিউক্লিয়টাইড্ ফসফেট্, NADPH) এবং আয়নিত হাইড্রোজেন (H+)-এর সাহায্যও আবশ্যক। এই সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটিই স্নেহাম্ল (Fatty
Acid)
সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াএই প্রবন্ধের প্রবন্ধকার কর্তৃকই ইউ-টিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিও (লিঙ্কটি হলঃ  https://www.youtube.com/watch?v=WsgIj7WiHCo)-এর মাধ্যমে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির পরম্পরাক্রমে সংশ্লেষণের মধ্য দিয়ে কিভাবে এক থেকে পরবর্তী (অধিকতর ২ পরমাণু কার্বন সহকারে) উচ্চ স্তরের স্নেহাম্লে উত্তোরণ ঘটে তা দেখান হয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, সরাসরি জৈব অ্যাসিডগুলি এই প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়ে এ. সি. পি. (অ্যাসাইল ক্যারিয়ার প্রোটীন, Acyl-Carrier Protein, ACP) নামক আমিষ বা প্রোটিনের ঘাড়ে চড়ে পুরো কাজ হাসিল করে। অর্থাৎ, শুরুতে অ্যাসেটিক অ্যাসিড্ কোএ-এর ঘাড়ে চড়ে (২ অনু অ্যাসেটাইল-কোএ হয়ে) আসে, তারপর এক অনু তৈরী করে ম্যালোনাইল-কোএ (Malonyl-CoA, ঐ কোএ-এরই ঘাড়ে চড়া দ্বি-কার্বোক্সিল যুক্ত ম্যালোনিক অ্যাসিড্, Malonic Acid) এবং পরবর্তী প্রত্যেক পরম্পরাতেই এই ম্যালোনাইল-কোএ সংযুক্ত হয়ে (বিভিন্ন ধাপে পরিবর্তিত হয়ে) তৈরী করে উচ্চ স্তরের স্নেহাম্ল। ভিডিওটি মনোসন্নিবেশ করে নিরীক্ষণ করলে (১৬ কার্বনযুক্ত পাল্মিটিক্ অ্যাসিড্, Palmitic Acid, পর্যন্ত) প্রত্যেকটি পরম্পরাক্রমের ধাপগুলি ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হতে থাকবে


         যুক্তিবাদী মানসিকতার সঙ্গে সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে বিচারের অনুরোধ সব্বার কাছে জানাই। সুতরাং, বয়স্করা বিশেষতঃ যাঁরা প্রধানতঃ শুয়ে-বসে দিন কাটান তাঁরা সক্কলেই এক্ষণ থেকেই সাবধান হয়ে যান
চিনি তথা মিষ্টদ্রব্য এবং তেলের সঙ্গে অধিক শর্করা বর্জন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, তবে যেহেতু বয়স্কদের আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা নাই সেহেতু প্রোটিন প্রধান খাদ্য থেকেও দূরে থাকা দরকার (অর্থাৎ বাঙালীর মাছ-ভাত শিশু-যুবারা খাক কিন্তু বুড়োদের পক্ষে মোটেই ভাল নয়) তাহলে, যথেষ্ট পরিমাণে (টক জাতীয় বা সাইট্রাস সহ) বিবিধ ফল ও শাক-সব্জী (পারলে যতটা সম্ভব কাঁচা, খুবই কম লবন ও মিষ্টি আদৌ না যুক্ত করে) ভক্ষণ বিধেয় বলে গণ্য করা যেতে পারে। বয়স্কদের প্রয়োজনীয় শর্করা, স্নেহ, আমিষ ও আনুষঙ্গিক খাদ্য ঐ ফল-মূল ও শাক-সব্জীতেই তো যথেষ্টই রয়েছে

–◊–

29 thoughts on “চিনি তথা মিষ্ট খাদ্য থেকে বয়স্করা সাবধান! –অতিরিক্ত শর্করা থেকে দেহে তেল-চর্বি সংশ্লেষণ”

  1. Hello, friend!
    scgarai.dr.in, Your consistency and kindness in this space don’t go unnoticed.

    I recently published my ebooks and training videos on
    https://www.hotelreceptionisttraining.com/

    They feel like a hidden gem for anyone interested in hospitality management studies. These ebooks and videos have already been welcomed and found very useful by students in Russia, the USA, France, the UK, Australia, Spain, and Vietnam—helping learners and professionals strengthen their real hotel reception skills. I believe visitors and readers here might also find them practical and inspiring.
    Unlike many resources that stay only on theory, this ebook and training video set is closely connected to today’s hotel business. It comes with full step-by-step training videos that guide learners through real front desk guest service situations—showing exactly how to welcome, assist, and serve hotel guests in a professional way. That’s what makes these materials special: they combine academic knowledge with real practice.

    With respect to the owners of scgarai.dr.in who keep this platform alive, I kindly ask to share this small contribution. For readers and visitors, these skills and interview tips can truly help anyone interested in becoming a hotel receptionist prepare with confidence and secure a good job at hotels and resorts worldwide. If found suitable, I’d be grateful for it to remain here so it can reach those who need it.

    Why These Ebooks and Training Videos Are Special
    They uniquely combine academic pathways such as a bachelor of hospitality management or a advanced hotel management course with very practical guidance on the duties of a front desk agent. They also cover the hotel front desk job description, and detailed hotel front desk duties and responsibilities.

    The materials go further by explaining the hotel reservation process, hotel check-in, check-out flow, guest relations, and practical guest service recovery—covering nearly every situation that arises in the daily business of hotel reception.

    Beyond theory, my ebooks and training videos connect the academic side of hospitality management studies with the real-life practice of hotel front desk duties.

    – For students and readers: they bridge classroom study with career preparation, showing how hotel and management course theory link directly to front desk skills.
    – For professionals and community visitors: they support career growth through questions for receptionist, with step-by-step questions to ask a receptionist in an interview. There’s also guidance on writing a strong receptionist job description for resume.

    As someone who has taught hotel and management courses for nearly 30 years, I rarely see materials that balance the academic foundation with the day-to-day hotel front desk job responsibilities so effectively. This training not only teaches but also simulates real hotel reception challenges—making it as close to on-the-job learning as possible, while still providing structured guidance.

    I hope the owners of scgarai.dr.in, and the readers/visitors of scgarai.dr.in, will support my ebooks and training videos so more people can access the information and gain the essential skills needed to become a professional hotel receptionist in any hotel or resort worldwide.

    Wishing you continued success with your site—truly.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *