করোণা (কোভিদ-১৯ বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস জনিত রোগ) সমস্যার সমাধান বিষয়ে



করোণা (কোভিদ-১৯ বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস জনিত রোগ) সমস্যার সমাধান বিষয়ে



করোণা (কোভিদ-১৯ বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস জনিত রোগ) সমস্যার সমাধান বিষয়ে

– ড. সুবোধ চন্দ্র গরাই

প্রাক্তন অধ্যাপক, কে. কে. দাস কলেজ, কলকাতা

প্রাক্তন অধ্যক্ষ, বারুইপুর কলেজ, কলকাতার দক্ষিণস্থ

     বিশ্বজুড়ে অতিমারী হিসাবে করোণার গ্রাস উত্তোরোত্তর বেড়েই চলেছে তা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা ২০১৯-২০ সালে প্রধানতঃ সাহেব-মেম, বৃদ্ধ-অতিবৃদ্ধ ও মধূমেহ-হাঁপানী-হৃদরোগ পীড়িত ব্যক্তিবর্গের কাছে ত্রাস হিসাবে শুরু হলেও এবছর আবার আমাদের এই দেশেই অসংখ্য যুবক-যুবতীকে মৃত্যুর করাল গ্রাসে প্রাণ হারাতে হয়েছে ও হচ্ছে। করোণা-সমস্যা বহু আলোচিত বিষয় আমি যেহেতু ডাক্তার বা ফার্মাসিষ্ট তথা রোগ ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ নই এবং উচ্চ স্তরের কোন প্রশাসকও নই বা ছিলামও না সেহেতু এ বিষয়ে সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়ার অধিকারী নই ঠিকই, তবে, সাধারণ ও সম্ভাব্য সমস্যাত্রস্ত ব্যক্তি হিসাবে (যেহেতু, সংশ্লিষ্ট গবেষণাধর্মী ও অন্যান্য যুক্তি-ভিত্তিক লেখালেখি ও আনুষঙ্গিক বিবিধ তথ্য ও উপাত্ত সমুহের প্রায় সমস্তই অল্পায়াসে ইণ্টারনেটে লভ্য) জ্ঞান, বিচার-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা অনুসারে আমার এখানে বিষয়টি সম্পর্কে কিছু লেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করি।

করোণা-ভীতিতে সারা বিশ্ব আজ সন্ত্রস্থ, জবুথবু এবং কার্যতঃ গৃহবন্দী (অধুনা এও শোনা যাচ্ছে গৃহ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষও নিরাপদ নয়)! এমতাবস্থায় সারা বিশ্বে নোভেল করোণা তথা কোভিদ-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে গবেষণা তথা ঐ ভাইরাস রোগটি থেকে আরোগ্য প্রচেষ্টা বিষয়ে এযাবৎ তথ্যাবলী নিম্নরূপঃ

প্রযুক্ত বা পরীক্ষাধীন ওষুধ ও বিভিন্ন রাসায়নিক ১৭৩৬
Substances / BioAssays ২০৫/ ২০০০
রোগটি সম্পর্কে স্বীকৃত ও উচ্চমানের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ১৬৩৭৯৫
ঐ ভাইরাসের জীন (Zene)/ প্রোটীন ৬৫২/ ৭৭০
ঐ ভাইরাস-অভ্যন্তরস্থ রাসায়নিক প্রক্রিয়া পাওয়া গেছে ২২৭৭
আন্তর্জাতিক স্তরে পেটেন্ট নথিভূক্ত হয়েছে ৭৩২৫
[তথ্যসূত্র (উপরোক্তগুলির) –
https://pubchem.ncbi.nlm.nih.gov/#query=covid-19 updated on 4th December, 2023]
সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত ও বিশ্বমানের করোণা-প্রতিশেধক (প্রযুক্ত) ৪০ (চল্লিশ – উইকিপেডিয়া তালিকা-অনুসারে)
[তথ্যসূত্র (শেষোক্তটির) –
COVID-19 vaccine দ্রষ্টব্যঃ অতিতে উল্লিখিত https://www.raps.org/…/2020/3/covid-19-vaccine-tracker উৎসে বর্তমানে তথ্য দেওয়া হচ্ছে না!]

বাপরে-বাপ, কি লম্বা ফিরিস্তি – যেন সেই একদল অন্ধলোকের হাতী দেখার সুদীর্ঘ লাইন! তবুও তো করোণা(কূল?)রাশি একপ্রকার অবাধেই রাজত্ব বজায় তো রেখেছেই বরঞ্চ প্রতিপত্তি, প্রাকট্য ও সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করেই চলেছে – উদ্ভুত ও বর্দ্ধমান সমস্যার সমাধান তো দূর অস্ত! পরিস্থিতি ও প্রচেষ্টা অনুধাবন করে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী একটি ছোট বিষয়ের উল্লেখ না করে আর আগানো যায় না এবং পরের অনুচ্ছেদে তা বিবৃত হল।

প্রস্তাবিত বিষয়টি সম্পর্কে শুরু করার জন্য “ভুলুক”* নামক একটি স্বল্পজন পরিচিত শব্দের অবতারণা পূর্বক ঐ শব্দটির সঙ্গে প্রথমেই আমরা সকলে কিছু পরিচিত হই। “ভুলুক” (আমাদের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার বাংলায়), গোগাল (বীরভূম জেলার বাংলায়), গুঁগাল (মুর্শিদাবাদ জেলার বাংলায়) বা ঘোগ (দুই ২৪ পরগণা জেলার বাংলায়) হল দুটি ধান জমির মাঝের আলে প্রধানতঃ ইঁদুরের গর্তের জন্য উপরের অর্থাৎ উঁচু জমির জল নীচের জমিতে বেরিয়ে যায় যে ফুটো দিয়ে সেই ফুটো বা গর্ত – এই গর্তের শুরু উপরের জমিতে বহু দূরে অগোচরে থাকার এবং পুরো সুড়ঙ্গটি এঁকা-বেঁকা সুদীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কাই স্বাভাবিক; অনন্তর (যদিও ঐ উপরের উঁচু জমিতে অবস্থিত ভুলুকের উৎস মুখটি ভাল ও শক্ত করে ঘাঁসের চাপ ও মাটি দিয়ে বন্ধ করা উচিৎ) উৎস মুখটি খুঁজে না পেলে কেউ কেউ নীচের অর্থাৎ নীচু জমিতে ঐ ভুলুকের জল নির্গমণ মুখটি বন্ধ করে – পরিণাম স্বরূপ ঐ নীচু নির্গমণ মুখটি যত শক্ত করেই বন্ধ করা হোক না কেন অচিরেই উপরের জমির জলের চাপে ভুলুকটি আবার চালু হয়ে ঐ উঁচু জমিটিকে শুকিয়ে কাঠ করে দেয় – অতঃপর চুড়ান্ত পরিণতি কি ঘটে তা সহজেই অনুমেয়!

এক্ষণে আসা যাক আমাদের মূল করোণা (কোভিদ-১৯ বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস জনিত রোগ) সমস্যার সমাধান বিষয়ে। প্রথমতঃ কোন স্বীকৃত ও দায়িত্বশীল গবেষক, গবেষণা সংস্থা বা ওষুধ কোম্পানী সারস্-কোভ-২ থেকে এই কোভিদ-১৯ নামক ছোঁয়াচে রোগের এপর্যন্ত ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করে নাই – অথচ ঐ (৯৭ খানা আন্তর্জাতিক স্তরের পেটেন্ট ও) ১৫৮৭ খানা রাসায়নিক যৌগ বা ওষুধ কি যুক্তিতে চালানো হচ্ছে এবং যদি লক্ষণানুসারে ব্যবহৃত হয় তবে তাতে (নিতান্তই জীবন-রক্ষাকারী অবস্থায় ছাড়া) মূল রোগের কি কোন সুরাহা হবে না প্রত্যক্ষে হৌক বা পরোক্ষেই হৌক বিরূপ পার্শ-প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়? দ্বিতীয়তঃ প্রতিশেধক বিষয়েঃ (১) ঐ (Genus Betacoronavirus, subgenus Sarbecovirus অন্তর্ভুক্ত) সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি পুনঃপুনঃ তার চরিত্র বদল করে চলেছে অর্থাৎ ঐ ভাইরাসটির (29,903-nucleotide positive-strand RNA genome) চরিত্র নির্ধারণক্ষম জীন সমুহের সমাহার জীনোমটি স্থান ও কালক্রমে অবারিত গতিতে নিজের অনুরূপ (কিন্তু হুবহু এক ধরণের না হওয়ারই সম্ভাবনাবহুল) সংখ্যাবৃদ্ধিকালে নিরবিচ্ছিন্ন তৎপরতায় পরিবর্তিত (mutated to new variants during its replications) হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে অভিযোজিত হয়ে চলেছে! [তথ্যসূত্রঃ (১) https://www.nature.com/articles/s41467-021-22905-7 ও (২) https://www.biorxiv.org/…/10.1101/2020.12.16.423071v1.full]; অতএব, এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ওষুধ বা প্রতিশেধক আবিষ্কারের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলা যায় না কি যে, এ এক সেই সুকুমার রায়ের খুড়োর কলের মতই নিরবিচ্ছিন্ন দৌড় – বছরখানেক আগের বা অন্য কোন দেশের করোণাকে নিয়ে গবেষণা করে আবিষ্কৃত টীকাকে যেন আজকের করোণা (এন্টনী ফিরিঙ্গী বই-এর ভোলা ময়রার মত) বলতে চায় “আমি সে করোণা নই রে আমি সে করোণা নই!” কিংবা মহাভারতের বনপর্বে (অধ্যায় ২০৯-এর ২৫ নং শ্লোকের প্রথম ২টি শব্দ) ব্যাধগীতার সেই ক্রোধী তপস্বী ব্রাহ্মণকে স্বাধ্বী গৃহবধূর উত্তর (“नाहं बलाकाআমি বক নই“)-এর মতই এবং (২) কোন রোগের মনুষ্য-শরীরে প্রয়োগযোগ্য সাফল্য-মণ্ডিত প্রতিশেধক আবিষ্কার করতে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীমহলের অভিমত যে ১০-১৫ বছরের প্রচেষ্টা তথা সাময়িক, অদূর-ভবিষ্যৎ ও সুদূর-ভবিষ্যতে মনুষ্য-দেহে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা দরকার। [তথ্যসূত্রঃ (১) https://www.historyofvaccines.org/…/vaccine-development… ও (২) https://www.thebodypro.com/…/why-researchers-think-hiv…] – সুতরাং (ঐ তথ্যসূত্রানুসারে ঐতিহাসিক তথ্যাবলী মাফিক) বর্তমানে চটজলদি আবিষ্কৃত (প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংসকারী HIV ভাইরাস আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৮৪ সালে কিন্তু আজ ৩৭ বছর পরেও ঐ ভাইরাস সৃষ্ট রোগ AIDS-টির প্রতিশেধক বের করা সম্ভবপর হচ্ছে না!) বহুদেশেরই সরকার-স্বীকৃত প্রচলিত প্রতিশেধকগুলি অন্ততঃ দীর্ঘকালীন পার্শপ্রতিক্রিয়ার নিরীখে কতখানি নির্ভরযোগ্য তা এক্ষণই কি বলা যায়? এইরূপভাবে সমস্যাটির সমাধানের সদিচ্ছা ও উদ্যোগকে অবশ্যই আবারও সবিনয়ে সাধুবাদ জানাই – তবে, ঐ ফুটোর নির্গমণ মুখে ভুলুক বাঁধার সঙ্গে তুলনা করা যায় না কি?

* [ঐ “ভুলুক” শব্দের কয়েকটি ওয়েব-লিঙ্কঃ

(১) http://inet.vidyasagar.ac.in:8080/…/15%203rd%20Chapter.pdf

(২) https://www.freebanglafont.com/bangla-to-bangla-meaning…

(৩) https://shilpajagat.com/%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%95/

(৪) https://cholobhash.com/archives/2563

(৫) https://hellotestingbanglakobita.com/2020-sep…/

(৬) https://www.youtube.com/watch?v=rKFY-ibKNfw

(৭) https://www.youtube.com/watch?v=2iKoh5xK]


এরপর, তাহলে আসা যাক মূল বিষয়টিতে – অর্থাৎ ঐ করোণা (কোভিদ-১৯ বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস জনিত রোগ) সমস্যার সমাধান বিষয়ে। মূল করোণা চিকিৎসার উপযুক্ত কোন ওষুধ আজ পর্যন্ত বের না হলেও ভাইরাস জনিত অসুখ হওয়ার জন্য এবং ভিন্ন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও লক্ষণ প্রায় একই হওয়ার জন্য ফ্লু (যার ভাইরাসের নাম Influenza A, B, C & D) রোগের কিছু কিছু ওষুধ (যেমন, Acetaminophen (Paracetamol), Ibuprofen, Naproxen (with high risk of side effects), Oseltamivir প্রভৃতি) ব্যবহার হচ্ছে – এদের মধ্যে ওসেল্টামিভির মূলতঃ ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ; অন্যদিকে এইড্স্ রোগের ভাইরাস্ HIV ঘনঘন চরিত্রবদলকারী হিসাবে সার্স-কোভ-২ (যে ভাইরাসটির বিভিন্ন সংস্করণ বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্নকালে মনুষ্যকূলকে এই কোভিদ-১৯ রোগাক্রান্ত করছে)-এর মতই তবে এইড্স্ সারে না, বর্তমানে অ্যান্টিরেট্রোভাইরেল্ (Antiretroviral therapy) নামক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং এর ছোঁয়াচে দোষটিও অনেকটাই কাটানো যায় – ঐ এইড্স রোগের নির্বাচিত কিছু ওষুধও (যেমন, Atazanavir, Azithromycin,
Clarithromycin, Cobicistat, DarunavirLevofloxacin,
Lopinavir, Maraviroc, Pyrazinamide, Ribavirin, Lopinavir-Ritonavir
যূগল, Tenofovir, Zidovudine প্রভৃতি – যদিও এদের বেশ কিছুই অধুনা এইড্স রোগে অচল বলেই বিবেচিত হয়) আক্রান্ত মনুষ্যদেহে লক্ষণানুসারে এবং প্রধাণতঃ ভাইরাসের আবরণামিষগুলি (Membrane Glycoproteins, M, Envelope Proteins, E এবং Spike Glycoproteins, S অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিড নামক জৈব-যৌগের মালা-আকারে রাসায়নিক-সমাহারে গঠিত বড় আকারের যৌগকে আমিষ বা প্রোটিন্ বলা হয়, সমস্ত উৎসেচক, জারক-রস বা এনজাইমগুলিই প্রোটিন্ এবং প্রোটিন্ গঠনের সূত্র ডি. এন্. এ. বা আর্. এন্. এ.-র জীনগুলিতে কোডন্ নামক সাংকেতিক পদ্ধতিতে লেখা থাকে ঐ সংকেতগুলি আবার স্থান ও কালভেদে ভাইরাসগুলি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ-খাওয়ানোর
জন্য ধীর গতিতে হলেও বদলায় যাকে মিউটেশন্ বলা হয়) বিশেষতঃ এস্-প্রোটিন্ (বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত ছবির উঁচু ফুস্কুড়ীগুলি যাদের প্রতিটির আবার ২ প্রান্ত
বাইরের এস্-১ প্রথম অ্যামাইনো অ্যাসিডের যে ক্ষারকীয় অ্যামাইনোর N সেই প্রান্তে ও এস্-২ শেষ অ্যামাইনো অ্যাসিডের যে অ্যাসিডের C তথা ভিতরের প্রান্তে অবস্থান করে এবং এই এস্-প্রোটিনই সংক্রমণ ঘটিয়ে আক্রান্ত কোষের ও ভাইরাসের আচ্ছাদন বিগলিত করে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়ঃ https://www.news-medical.net/health/What-are-Spike-Proteins.aspx) বিনষ্ট করতে ও সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণোদ্দেশ্যে কোভিদ-১৯ রোগে ব্যবহৃতও হচ্ছে। এছাড়াও ম্যালেরিয়া-ব্যাকটেরিয়ার জন্য ওষুধ
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, অ্যাণ্টিভাইরাল্ রেমডেসিভির্ সহ আরও বহু ওষুধই লক্ষণানুসারে
এই রোগে ব্যবহৃত হচ্ছে (
https://www.nature.com/articles/s41579-020-00459-7/figures/5) তবে, প্রতিটি (অদূর বা সুদূর অতীতে অন্য অসুখের জন্য আবিষ্কৃত) প্রযুক্ত ওষুধেরই কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সন্দেহাতীত তথা প্রশ্নাতীত নয়! বিশেষতঃ মুখ দিয়ে খাবার বা ইঞ্জেকশন দিয়ে রক্তে মিশিয়ে দেওয়ার ওষুধগুলি তো শরীর-মনের অল্প-বিস্তর বিপর্যয় ঘটাতেই পারে!

অতঃপর, এখন সাধারণভাবে ভাইরাসের এবং বিশেষভাবে এই করোণা ভাইরাসের (সমস্যা সমাধানের প্রেক্ষাপটে) বেশ কিছু ও প্রাসঙ্গিক বৈশিষ্ট তথা চরিত্র (যার বেশ কিছু প্রসঙ্গক্রমে আগের অনুচ্ছেদগুলিতেও উল্লেখ করা হয়েছে) অনুধাবন করা যাক এবং সেগুলি থেকে সমস্যাটির বাস্তাবানুগ ও সুষ্ঠু সমাধান কি হওয়া উচিৎ তা উপলব্ধি করা যাক – যথাঃ

১। আধুনিক ধারণা মতে ভাইরাস জীব নয় যদিও জীবের মত এদের ডি.এন্.এ. বা আর্.এন্.এ. থাকে যার মধ্যে কোডন (প্রোটীনের উপাদান অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির প্রতিটির জন্য ৩টি নিউক্লিওটাইডের গুচ্ছ) নামক সংকেতগুলি জীনগুলিতে সাজানো থাকে এবং এই কোডনগুলিই (যখন ঐ জড়বৎ ভাইরাস কোন জীবদেহে আশ্রয় করে কর্মশক্তি ফিরে পায় তখন) আক্রান্ত-কোষ থেকে রসদ সংগ্রহ করে ঐ কোডনগুচ্ছ মোতাবেক জীবের মতই প্রোটীন (অনন্তর এনজাইম) তৈরী ও নিজের সংখ্যাবৃদ্ধি করে। অতএব, ঠিক জীবের মত ভাইরাসের জন্ম বা মৃত্যুর কথা ভাবা ঠিক নয় এমনকি বিশ্বোষ্ণায়নের পরিণামে সুমেরুবৃত্তে প্রাগৈতিকহাসিক যুগের অতীব ঠাণ্ডা বরফের সমাধি থেকে অধুনা বের হয়ে আসা বৃহদাকার ভাইরাসকেও কর্মশক্তি ফিরে পেতে দেখা গেছে (https://www.nature.com/articles/nature.2014.14801)

২। উপরের সকল আলোচনা থেকেই তাহলে বলা যেতে পারে যে, (ক) হয় (১) প্রোটীনগুলি বা জীনগুলি রাসায়নিক বা অন্যভাবে বিনষ্ট করা নতুবা (২) সংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করার জন্য ভাইরাসকে নিস্তেজ করা দরকার অথচ (খ) ঐ প্রকৃয়ার কোনটিতে যাতে আক্রান্তের শারিরিক বা মানসিক অবস্থা অন্যভাবে বিশেষ বিঘ্নিত না হয় অর্থাৎ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেন সহ্যের মাত্রা অতিক্রম না করে তা নিশ্চিত করাও একই সঙ্গে উচিৎঐ কাজগুলি একক ব্যক্তি (বা যৌথভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের) আরোগ্যের জন্য করা যেতে পারে এবং সঙ্কীর্ণ পরিসরে বাস-কক্ষে বা অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত এলাকায় আক্রমণ প্রতিহত করার ব্যবস্থা অর্থাৎ ব্যক্তিগত স্তরে বা এলাকা ভিত্তিতে প্রতিশেধকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩। ভাইরাসের (১) প্রোটীনগুলি বা জীনগুলি রাসায়নিকভাবে বিনষ্ট করতে বা (২) সংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করতে যদি ওষুধ তথা রাসায়নিক পদার্থ খাওয়ান বা ইঞ্জেকশন করে রক্তে মিশানো হয় তবে তো ওই বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমূহ আশঙ্কা  অনন্তর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা লঘুকরণের লক্ষ্যে অন্য কোন পদ্ধতির অনুসন্ধান আবশ্যক বলে মনে হয়।

৪। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও গত দেড়বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, (১) সাবান ও ডিটারজেন্টগুলির রাসায়নিক কণার ২টি অংশ মাথা (যা হাইড্রোফিলিক অর্থাৎ জল আকর্ষণকারী) ও লেজ (যা হাইড্রোফোবিক অর্থাৎ তেল আকর্ষণকারী) যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইবোলা, করোণা ইত্যাদির বহিরাবরণ লিপিড্ বা তৈলাক্ত স্তর যা সাবান-জলের সাবানের ঐ লেজ অংশ আকর্ষণ পূর্বক ভাইরাসের গঠনটি ভেঙ্গে ফেলে লণ্ডভণ্ড করে ও সাবান জলে ধ্বংসস্তুপ বিদায় করতে সক্ষম, সেহেতু সাবান-জল উপযুক্ত ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা উচিৎ এবং (২) পরীক্ষায় প্রমাণিত সাধারণ মদ (ইথানল্), এন্-প্রোপানল্, আইসোপ্রোপানল্, সোডিয়াম্ হাইপোক্লোরাইট্, ক্লোর্হেক্সিডাইন্, ক্লোরোজাইলেনোল্ (Para-chloro-meta-xylenol, 4.8% of Dettol’s total admixture) ও সমতুল বা সমজাতীয় রাসায়নিক যৌগগুলি (Antiviral Chemical Compounds especially, alcohols are amphiphilic compounds, i.e., both hydrophilic and hydrophobic) কঠিন বস্তুর উপর থাকা করোণা ভাইরাসগুলির সংখ্যাবৃদ্ধি সহ কার্যকারিতা নষ্ট করে এবং ঠিক মাত্রা, সময়কাল ও গাড়ত্ব মেনে ব্যবহার করলে ভাইরাসকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয় (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7521917/, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7550876/), সুতরাং এগুলিও উপযুক্ত ক্ষেত্রে বেশি বেশি ব্যবহার করা উচিৎ।

৫। যদিও রোগটি প্রকাশিত হওয়ার পরে আস্তে আস্তে শরীরাভ্যন্তরস্থ যন্ত্রাদি (যথা বৃক্ক বা কিডনী, যকৃৎ বা লিভার, পরিপাক তন্ত্র প্রভৃতি)-কেউ নষ্ট করে দিতে পারে, তবে প্রধানতঃ শ্বাস-প্রণালীর বিভিন্ন অংশ অর্থাৎ নাক-মুখ, গলাভ্যন্তর এবং বিশেষতঃ ফুসফুসটিকে আক্রমণের সম্ভাবনাই প্রবল – অতএব, নাক-মুখ ও গলাভ্যন্তর বারংবার উপযুক্ত ও কার্যকরী অথচ সহনক্ষম ও দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-বিহীন রাসায়নিক বা তাদের জলীয় দ্রবনে গলনালী কুলকুচা (gargle) করার বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে (ব্যক্তিগতভাবে আমি ঈষদুষ্ণ নূন-জলে অনুরূপ রাসায়নিক তরল ২-৪ ফোঁটা মিশিয়ে ২০২০-র গোড়ার দিক থেকেই গত প্রায় দেড় বছর ধরে দিনে-রাতে ৩-৪ বার গলনালী কুলকুচা করি ও এখনও পর্যন্ত ঠিকই আছি – যদিও ২০২০-র নভেম্বরে আমার বৌমার এই রোগটি হয়েছিল, ঐ বৌমা এশিয়ার প্রথম কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেরই করোণা-ওয়ার্ডে তারপর থেকেই প্রায়ঃশই সন্ধ্যা ৮টা থেকে সকাল ৮টা সহ সেবায় কর্তব্যরতা, আমার ছেলেও সপ্তাহে একদিন ২৪ ঘণ্টা সহ কলকাতার বেলেঘাটার সরকারী ছোঁয়াচে রোগের (Beleghata ID) হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে কর্তব্যরত এবং অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ শিক্ষক, আমি এই রোগের জন্য আজ পর্যন্ত কোন ওষুধ-প্রতিশেধক ব্যবহার করি নাই)

৬। প্রধানতঃ উদ্ভিদ-জগৎ থেকে প্রাপ্তব্য জৈব-যৌগ তথা ফাইটোকেমিক্যালগুলি এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যায় যে জৈব-যৌগগুলি সেগুলি সাধারণতঃ মানবদেহে তেমন উল্লেখযোগ্য রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটায় না সেজন্য ওষুধ-প্রতিশেধক হিসাবে এগুলির অনেকই বেশি উপযুক্ত, যদিও অনেকসময় ফাইটোকেমিক্যালে সাড়া পেতে সময় লাগে। অ্যালকোহলের বৈশিষ্টযুক্ত (অর্থাৎ -OH তথা hydroxyl group) ফাইটোকেমিক্যালগুলির মধ্যে ফ্লেভোনল্ বা টারপিনিওল্ জাতীয় জৈব-যৌগগুলির মধ্যে থেকে বা সমধর্মী প্রাকৃতিক উপাদান থেকে সার্স্-কোভ-২ বা অনুরূপ লিপিড্-মেমব্রেন-সম্বলিত ভাইরাসের বিনাসকারী সুগন্ধী তথা উদ্বায়ী তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাসক (Adhatoda vasica বা Justicia adhatoda) গাছ থেকে প্রাপ্তব্য Vasicine নামক অ্যালকালয়েড্ জাতীয় জৈব যৌগ তথা ফাইটোকেমিক্যাল থেকে কিছু গঠনগত পরিবর্তিত (২ টি ব্রোমিন পরমাণু যুক্ত করে এবং মাঝের নাইট্রোজেন যুক্ত রিংটি ভেঙ্গে) রূপে ব্রোম্হেক্সাইন্ যৌগটি Serine Protease TMPRSS2 Inhibitor-এর ভূমিকায় সার্স-কোভ-২-র বিরূদ্ধে সম্ভাব্য ওষুধ হিসাবে আশাপ্রদভাবে বিবেচনাধীন (তথ্যসূত্রঃ নীচের (৮) নং, https://en.wikipedia.org/wiki/Bromhexine, https://en.wikipedia.org/wiki/TMPRSS2https://en.wikipedia.org/wiki/Justicia_adhatoda)। এতৎ লক্ষ্যে অনুসন্ধানকারী কয়েকটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের ওয়েব-লিঙ্ক দেওয়া গেলঃ

(১) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7211506/
(২) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7691142/
(৩) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7314502/
(৪) https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0022286020317488
(৫) https://www.mdpi.com/2218-273X/11/1/74
(৬) https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/17663539/
(৭) https://www.omicsonline.org/pdfdownload.php?download=open-access-pdfs/antiviral-phytochemicals-an-overview-2168-9652-1000220.pdf&aid=90826
(৮) https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/33463480/ (বাসকের গুণ সম্পর্কে)

পরিশেষে সবকিছু বিবেচনা করে আমার মনে হয় (সাবান, দৈহিক দূরত্ব ও উপযুক্ত মুখোশ ব্যবহারের সঙ্গে) সার্স-কোভ-২-এর লিপিড-আচ্ছাদন ভেদ করার বা ভাইরাসটির সংখ্যাবৃদ্ধি রোধ করার ক্ষমতা রাখে যে রাসায়নিক যৌগ, ফাইটোকেমিক্যাল বা উদ্বায়ী-সুগন্ধীতেল সেগুলি যদি ইন্হেলার, অক্সিজেনের সাথে বা গার্গল্ করা যেতে পারে তবে সেগুলিই বেশি করে (যদি ক্ষতিকর না হয় তাহলে সুযোগানুসারে ওষুধ বা প্রতিশেধক হিসাবে) ব্যবহার করলে উপকার ভাল হবে ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। সর্বোপরি “বল বল নিজের বল” – সুতরাং, যথোপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন পূর্বক নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টাটকা ও পরিষ্কার ফল-মূল (যেমন, লেবু বা সমগোত্রীয় ফল), শাক-সব্জী প্রভৃতি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ্বাসযন্ত্রাদি শক্তিশালী করার জন্য কাফেন্, থিওফাইলিন্ ও/ বা থিওব্রোমাইন্ (Xanthine Derivatives) সমৃদ্ধ পরিমিত পরিমাণে চা, কফি বা কোকো জাতীয় পানীয় পান করা যেতে পারে।

[The author of this article allows as open license to all researchers, research institutions and corporate establishments to apply the information/ ideas/ suggestions expressed in the article starting at least as hypotheses for all experiments/ clinical trials or the like and the author will claim no benefits whatsoever except acknowledgement for such experiments/ applications, for the sake of welfare of the humankind.]


4 thoughts on “করোণা (কোভিদ-১৯ বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস জনিত রোগ) সমস্যার সমাধান বিষয়ে”

  1. Pingback: অর্জুন ও মনসা গাছ এবং করোণা নিরাময় যোগ্যতা - ড. সুবোধ চন্দ্র গরাই %

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *