কার্যকরী মশলা আজিনা- মো-টো ও খাদ্য সামগ্রী সম্পর্কে

এম্. এস্. জী. (MSG, Monosodium Glutamate) খাদ্যের সঙ্গে যুক্ত করা-নাকরা প্রসঙ্গেঃ

মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG, Monosodium Glutamate) যা আমাদের বাজারের দোকানে “আজীনা মোটো” (অপভ্রংশে “আরচিনামটর”) নামে কিনতে পাওয়া যায় এবং প্রায় সমস্ত চীনা রেষ্টুরেন্টে খাদ্যের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়, তার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে চীন, জাপান সহ সুদূর প্রাচ্যের সমুদ্র তীরবর্তী প্রায় সব দেশেই। যদিও বহু প্রাচীন কাল থেকেই ঐসব দেশে এই মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট রাসায়নিক পদার্থ বহুল সামুদ্রিক একপ্রকার কোম্বু নামক উদ্ভিদের রস (seaweed kelp juice) খাবারে মেশান হত, তবে জাপানের এক রেষ্টুরেন্টে খেতে খেতে ড. কীকুনে ইকেডা নামক একজন টোকিও ইম্পীরীয়্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী-অধ্যাপকের মাথায় প্রথমে ঐ কোম্বু বা কেল্প রসের স্বাদ-বৃদ্ধিকারক গুন অনুসন্ধানের আগ্রহ জাগে; অতঃপর, তিনি ঐ মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট রাসায়নিক পদার্থটির খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিকারক গুনটি আবিষ্কার করেন – তিনি ঐ বিশেষ স্বাদটির নামও দেন উমামী (savory taste), তিনি রসায়নাগারে এম্. এস্. জী. তৈরী করতেও সক্ষম হন। সমস্ত রকম জীবকূলের সাধারণভাবে আমিষ তথা প্রোটীন (বিভিন্ন এনজাইম সহ) প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় ২০টি অ্যামাইনো অ্যাসিড। ওগুলি ছাড়াও ওরনিথাইন ও সেলেনোসিষ্টাইনও কখনও কখনও দরকার হয় এবং ঐ ২০টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের মধ্যে ৯টি মানবদেহ প্রস্তুত করতে অক্ষম – অমরন্থ জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ Quinoa-তে অন্যান্য খাদ্যগুন সহ ঐ ৯টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডই (অর্থাৎ, F=ফিনাইল অ্যালানিন, V=ভ্যালাইন, L=লিউসিন, I=আইসোলিউসিন, M=মেথিওনাইন, T=থ্রীওনাইন, H=হিস্টিডাইন, W=ট্রীপটোফ্যান এবং K=লাইসিন) রয়েছে। আসলে, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট হল তাদেরই মধ্যে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড “গ্লুটামিক অ্যাসিড”-এর সোডিয়াম লবন এবং এর স্বাদ নামমাত্র লবনাক্ত হলেও এক বিশেষ প্রকারের – অর্থাৎ, মিষ্ট, নোনতা, তেঁতো ও টক (আমরা আবার ঝালকেও তো আলাদা স্বাদ হিসাবে ধরি) এদের সবার থেকে আলাদা, তাই এর নাম হয় ইমামী বা স্যাভরী। পরবর্তীকালে, ঐ বিজ্ঞানীর অনুরোধে ঐ রাসায়নিক পদার্থটিকে বিপননযোগ্য পন্য হিসাবে আজী-নো-মোটো (যার জাপানী মানে “স্বাদের নির্যাস”) নামে প্রথমে, ১৯০৮ সালে Suzuki Pharmaceutical Co., Ltd.-এর একটি নূতন বিভাগ তৈরী করে উৎপাদন ও বিপনন শুরু করার পর ১৯০৯ সালে Ajinomoto Co., Inc. নাম দিয়ে জাপানের টোকিওতে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। অচিরেই পন্যটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।
শিল্পের প্রয়োজনীয় গ্লুটামেট প্রধানতঃ আখ থেকে প্রস্তুত করা হয়। সামুদ্রিক কোম্বু বা কেল্প ছাড়াও আরও কিছু খাদ্যে (যেমন, টম্যাটো, কাল অলিভ, পোরসিনি জাতীয় ছত্রাক, সয়-সস্ ইত্যাদি এবং সাধারণ ও মিষ্টি আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গাজর, মটর সুঁটি, বাঁধাকপি, ব্রকোলী, অ্যাসপারাগাস্ প্রভৃতিতে অল্প পরিমাণে) কম-বেশী ঐরূপ উমামী বা স্যভরী স্বাদ রয়েছে। official “Umami Information Center” (website address: ‘http://www.umamiinfo.com/’)-এর মতে যে সকল খাদ্যে (সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ম্যাগনেশিয়াম) গ্লুটামেটের অথবা বিশেষ ২ প্রকারের নিউক্লিওটাইড্ যথা, ইনোসিনেট (Inosinate) বা গুয়ানাইলেট (Guanylate)-এর উপস্থিতি রয়েছে সেগুলিরই উমামী স্বাদ আছে। প্রধানতঃ মাংসে (যেমন সদ্য মৃত শূকরের মাংসে) ও মাছে ইনোসিনেট এবং সীইটেক (Shiitake) প্রভৃতি শ্রেণিভূক্ত শুকানো ছত্রাকে প্রভূত পরিমাণে গুয়ানাইলেট বর্তমান রয়েছে। খাদ্য বস্তুটি বাসি বা পুরাতন (ফলের ক্ষেত্রে শুকানো) হলে গ্লুটামেট বাড়তে থাকে কিন্তু (মাংস বা মাছের ক্ষেত্রে) ইনোসিনেট দ্রুত কমতে থাকে।
হয়ত বা জাতিগত বিদ্বেশ বশতঃই, পশ্চিমি বহু দেশ পন্যটির (অর্থাৎ. মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের) স্বাস্থ্যহানিকর প্রভাবের অজুহাত দেখিয়ে এর ব্যবহারের প্রচলনে রাস টানার জন্য অপপ্রচার শুরু করে দেয়। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোন গবেষণার ফলাফলই এই রাসায়নিক পদার্থটির প্রত্যক্ষ কোন স্বাস্থ্যহানিকর খারাপ প্রভাব সমর্থন করে নাই। তবে, খাবারের আশাতীত স্বাদ বৃদ্ধি জিভের স্বাদ-কোরকগুলিকে ভীষণভাবে সক্রিয় করে, মুখে যথেষ্ট লালা বের হয় এবং নিউরোট্রান্সমীটারগুলির কার্যকারিতার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলি সচেতন হয় – ফলে, অত্যল্প সংখ্যায় হলেও কোন কোন ব্যক্তির অস্থায়ীভাবে সামান্য মাত্রায় মাথাধরা সহ কিছু কিছু অসুবিধা দেখা যেতে পারে। তাছাড়া, সুস্বাদু খাবার অস্বাভাবিক ভাবে মাত্রাধিক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে দায়ী কি এম্. এস্. জী না পেটুকতা তথা নিজেদের অবিমিশ্রকারিতা? তা যাই হোক, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ”খাদ্য ও ভেষজ প্রশাসন” এম্. এস্. জী.-কে “নিরাপদ হিসাবে সাধারণভাবে স্বীকৃত”-এই মর্মে ঘোষণা করেছে। সুতরাং, রান্নাকরা এম্. এস্. জী. মেশান খাদ্যসামগ্রী মাঝে-মধ্যে নিরাপদে গ্রহণয়োগ্য – তবে অবশ্যই (১) মাত্রাতিরিক্ত ভোজন এবং (২) বিশেষ বিশেষ খাদ্য উপকরণগুলির নিজস্ব সব খারাপ ফলগুলি সম্পর্কেও সদা সচেতন থাকা অবশ্য কর্তব্য।
এই প্রসঙ্গে বাঙ্গালী অধ্যাপক-অধ্যাপিকার পুত্র আমেরিকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে পোষ্ট-ডক্টোরেল স্তরে গবেষণারত বন্ধুপুত্রের কাছ থেকে সবে পাওয়া একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিওর লিঙ্কটিও (প্রথমটিই) এখানে দেওয়া গেল। আরও বেশী জানার জন্য কিছু সংখ্যক অতিরিক্ত লিঙ্ক নীচে দেওয়া গেলঃ
(১) https://www.facebook.com/ajplusenglish/videos/695723920759732/
(২) https://en.wikipedia.org/wiki/Ajinomoto
(৩) https://en.wikipedia.org/wiki/Umami
(৪) https://www.mayoclinic.org/healthy-lifestyle/nutrition-and-healthy-eating/expert-answers/monosodium-glutamate/faq-20058196
(৫) http://healthyeating.sfgate.com/msg-affect-health-1095.html
(৬) https://www.finedininglovers.com/blog/food-drinks/umami-foods/
(৭) http://www.umamiinfo.com/faqs/

1 thought on “কার্যকরী মশলা আজিনা- মো-টো ও খাদ্য সামগ্রী সম্পর্কে”

  1. Hey there would you mind stating which blog platform you’re working
    with? I’m looking too start my own blog soon but I’m having a
    hard time making a decision between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal.
    The reason I ask is because your deswign seems different then most logs and I’m lookig for something completely unique.
    P.S My apologies for being off-topic but I had to ask! https://bandur-art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *